নতুনদের রিটেন পরীক্ষায় যেসব ভুল
বিসিএস পরীক্ষা বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা হল দেশব্যাপী পরিচালিত একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা যা বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিসিএস (প্রশাসন), বিসিএস (কর), বিসিএস (পররাষ্ট্র) ও বিসিএস (পুলিশ) সহ ২৬ পদে কর্মী নিয়োগের জন্য পরিচালিত হয়।
প্রিরিমিনালি পরীক্ষা দেওয়ার পর এরপরের ধাপ হচ্ছে রিটেন পরীক্ষা।তবে যারা বিবিএস পরীক্ষায় নতুন তারা অনেকে অভিজ্ঞতা না থাকায় বেশ কিছু ভুল করে থাকে। আজকে নতুনদের সেইসব ভুল ও তা কিভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে জানব-
★ অনেকেই মনে করেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় টিকে যাওয়া অনেক সহজ।তাই প্রিলিমিনারির জন্য প্রস্তুতিই না নিয়েই রিটেন পরীক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
তাদের জন্য বলব একটা কথা মাথায় রাখবেন বিসিএসের সবচেয়ে কঠিন ধাপ হলো প্রিলিমিনারি। প্রায় পাঁচ লাখ ‘ক্যান্ডিডেট’দের সাথে প্রতিযোগিতা করে আপনাকে টিকে থাকতে হবে দশ থেকে পনেরো হাজারের মধ্যে। এখানে অনেক ‘ট্যালেন্টেড ক্যান্ডিডেট’রাও বাদ পড়ে যায়। অনেকে দেখি প্রিলিমিনারি পাস করেননি কখনো, তারাও রিটেনের জন্য ব্যাকুল হয়ে যান। কিন্তু আমি বলছি আপনারা রিটেন না পড়ে সকল বিষয়ে ‘ব্যাসিক’ জ্ঞানটা বাড়ান আর প্রিলি পড়েন। বিসিএসে ‘ব্যাসিক’ জ্ঞানটা খুব দরকার। প্রিলি উত্তীর্ণ হতে পারলে রিটেনের জন্য যে সময়টা পাবেন সেটা ভালোভাবে কাজে লাগান তাহলে আপনি সহজেই উৎরে যাবেন। আর প্রিলি উত্তীর্ণ হলে আপনার ‘কনফিডেন্স’ বেড়ে যাবে আর তাতেই আপনি রিটেনে ভালো করার জন্য যথেষ্ট সাহস পাবেন, আর এ সময়টা ভালো করে কাজে লাগতে পারলেই আপনি সফল।
★ অনেকেই মনে করেন রিটেন পরীক্ষার ১ মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করব।১ মাস অনেক সময়।তবে এই ধারণাটি একেবারেই ভুল।লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীকে ৫ দিনে সবমিলিয়ে ২১ ঘন্টা লিখতে হয়।তাই প্রস্তুতি ভাল না হলে উত্তরপত্রে ভাল লিখতে পারবেন না।আপনি সর্বোচ্চ চার মাস সময় পাবেন রিটেন প্রস্তুতি নেবার জন্য।এর বেশি সময় পেলে সেটা হবে বোনাস। যেখানে স্ট্র্যাটেজিক মেথডে না এগোলে এই বিশাল সিলেবাসের সমুদ্রে ডুবে যাবার রয়েছে সমূহ সম্ভাবনা।
সে কারণেই আপনার প্রিপারেশন নেওয়ার ধরণ হতে হবে qualitive, not quantative. বেশি পড়বেন ঠিক আছে তবে বুঝে-শুনে। সবসময় যা পড়বেন, তা খাতায় কিভাবে প্রেজেন্ট করবেন সেটা ভেবে পড়া উচিত।
★ নতুনরা প্রায় সময়ই দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যায় ২১ ঘন্টা উত্তরপত্রে কিভাবে লিখবে।এক্ষেত্রে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে বা হতাশায় ভোগে।
নতুনদের জন্য এক্ষেত্রে করণীয় হতে পারে তারা প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেওয়ার পরপরই প্রতিদিন লেখার অভ্যাস করা।সম্ভব হলে বাসায় ঘড়ি ধরে লিখতে বসা।১ ঘন্টায় কতটা পৃষ্ঠা লিখতে পারে বা লিখার গতি কিভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দেওয়া।সেইসাথে খেয়াল রাখতে হবে বৃত্ত ভরাট করতে যাতে ভুল না হয়।অতিরিক্ত পৃষ্ঠা নেওয়ার পর অবশ্যই সাথে সাথে বৃত্ত ভরাট করতে হবে।
★ নতুন পরীক্ষার্থীরা আরেকটি সমস্যার সম্মুখীন হয় আর তা হলো সময় ব্যবস্থাপনা।
সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনা না করতে পারায় দেখা যায় প্রশ্নটি সম্পূর্ণ শেষ করতে পারে নি।তাই প্রথমেই সময় ব্যবস্থাপনা করা উচিত।সেইসাথে কিভাবে শুরু করবে এবং কত সময় নিয়ে প্রশ্নটি লিখবে তা আগে থেকেই স্থির করে নিতে হবে।ভূমিকা,মধ্যম অংশ ও উপসংহার এভাবে সাজিয়ে সময় ব্যবস্থাপনা করতে হবে।২০০ নম্বরের পরীক্ষায় প্রতি নম্বরের জন্য ১.২০ মিনিট এবং ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় প্রতি নম্বরের জন্য ১.৮০ মিনিট করে সময় পাবেন। এভাবেই প্রতিটি প্রশ্নের নম্বরের দিকে লক্ষ রেখে তার জন্য সময় বরাদ্দ করবেন।
★অনেকেই একাধিক বই পড়ে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।যার ফলে শেষ মুহূর্তে কোন বিষয়েরই প্রস্তুতি ভালভাবে হয় না।এক্ষেত্রে এক বা দুই সেট যেকোনো প্রকাশনীর গাইড বই দেখে সিলেবাসের বিষয়ভিত্তিক টপিকগুলো ক্লিয়ার করে নিতে পারেন। শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যবই ও রেফারেন্স বইগুলো মিলিয়ে গাইড বই লিখা হয়। তিন-চার মাসে বা অল্প সময়ে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে এটি সহায়ক হবে।
★ সিলেবাসের বড় পরিসর দেখে অনেকেই হাল ছেড়ে দেয়।শেষ করতে পারবে না, টপিক অনেক বেশি কঠিন বলে মনে করে। এক্ষেত্রে, পুরো সিলেবাস ৫০-৬০ দিনে ভাগ করে একদিক থেকে পড়া শুরু করুন। বিগত চারটি বিসিএস পরীক্ষা বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলের পর লিখিত পরীক্ষার জন্য কমপক্ষে তিন মাস সময় পাওয়া যায়। প্রতিদিন সে অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে পড়তে থাকুন।
★ আমাদের অনেকেরই ইংরেজি ভীতি রয়েছে। ইংরেজি লিখতে গেলে অনেকের মাঝেই ভয় বা ভীতি কাজ করে।
তাই ইংরেজি বিষয়ে প্রস্তুতি আমাদের ভালভাবে নিতে হবে।ইংরেজির প্রস্তুতিতে নিয়মিত ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিং অনুশীলন করবেন। এর পর একজন ইংরেজি এক্সপার্টকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়। দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় অংশের পাশাপাশি অনলাইন নিউজ পোর্টালের বাংলা ও ইংরেজি খবর দেখে অনুবাদ চর্চা করতে পারেন।এক্ষেত্রে অনেকটায় সফলতা আনায়ন সম্ভব।
★ অনেকেই উত্তরপত্রে অবাঞ্ছিত লেখা দিয়ে উত্তরপত্র ভর্তি করে ফেলি।এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় তথ্য বা লেখা থাকে যা দরকার নেই বললেই চলে।উত্তরপত্রে আপনার লেখা হতে হবে তথ্যবহুল। যেমন—একটি বিষয়ের গুরুত্ব আলোচনা করার সময় স্কুল-কলেজ লেভেলের মতো গতানুগতিকভাবে না লিখে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক গুরুত্বগুলো গবেষণাধর্মী তথ্য, উপাত্ত ও উদ্ধৃতির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে হবে।
★ অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা খাতার প্রেজেন্টেশন ভালোভাবে বুজতে পারে না।যার ফলে খাতা এতো বেশি আকর্ষণীয় লাগে না।উত্তরপত্রে প্রেজেন্টেশনের জন্য কালো কালির পাশাপাশি কোটেশন লিখতে নীল কালি ব্যবহার করতে পারেন; স্কেলিং, গ্রাফ, চার্ট অবশ্যই পেনসিল দিয়ে করবেন। হাতের লেখা সুন্দর হলে ভালো, না হলে উত্তরপত্র পরিপাটি রাখার চেষ্টা করবেন।
★অনেকেই আছে যারা শুধু বিভিন্ন ধরণের বই পড়েই রিটেনের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।বইয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা (চলতি বছর), দৈনিক সংবাদপত্র ও অন্যান্য বিষয়-সংশ্লিষ্ট রেফারেন্স বই থেকে যত বেশি তথ্য-উপাত্ত নিতে পারবেন, আপনার লেখা ততই সমৃদ্ধ হবে।
নতুনরা যারা আছেন তারা যদি রিটেন পরীক্ষার আগে এই ভুলগুলো সমাধান করার চেষ্টা করেন তবে,রিটেন পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করা সম্ভব।