গাইডলাইন নিয়ে নিজে বিসিএস প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন নাকি কোচিং করবেন?

বলা হয়ে থাকে যেকোনো কাজের সফলতা তার প্ল্যান এর উপর নির্ভর করে। একটি সুনির্দিষ্ট প্ল্যান আপনাকে অনেকটাই এগিয়ে রাখে অন্যদের চেয়ে। বর্তমান সময়ে বিসিএস প্রস্তুতি বহুল আলোচিত বিষয়। তবুও অনেকেই বুঝে উঠতে পারেনা কিভাবে প্রস্তুতি নিলে তারা শতভাগ সফলতা লাভ করবে।

চাকরি প্রস্তুতিতে প্রথমেই সবার মাথায় যে বিষয়টি আসে তা হলো কোচিং নাকি নিজে গাইডলাইন নিয়ে পড়াশোনা করা। এ দুটো বিষয় নিয়ে আজকের আয়োজন। জেনে নেয়া যাক এ দুটো বিষয়ের বিভিন্নদিক।

প্রথমত, বিসিএস প্রিলিমিনারি তে পাস করতে কি কি বিষয় আসলেই গুরুত্বপূর্ণ তা কি আপনি জানেন? অনেকেই বলে ১৬/২০ ঘন্টা পড়াশোনা আবার কেউ বলে ব্যাসিকের উপর গুরুত্ব দিয়ে কোশ্চেন সমাধান করতে। আসলেই কোনটা আপনার জন্য জরুরি?

যেকোনো বিষয় প্রস্তুতির প্রথমদিকে আপনার সেই চাকরির পরীক্ষার কোশ্চেন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকা জরুরি। তেমনই বিসিএসের প্রিলিতে পাস করার জন্য পরিকল্পনার পাশাপাশি কিছু টেকনিক অবলম্বন করা উচিত। এ পরীক্ষায় আমরা দুই গ্রুপ প্রার্থী পেয়ে থাকি।

১. যারা একেবারেই এই পরীক্ষার সাথে নতুনভাবে পরিচিত হচ্ছে।
২. যারা এর পূর্বে অংশগ্রহণ করেছে।

এ দু ধরনের প্রার্থীর জন্য দুরকম প্রস্তুতি কৌশল অবলম্বন করতে হবে। সহজভাবে বলতে, যারা একেবারেই নতুন তাদের জন্য কিভাবে এই সময়ের মাঝে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সফল হওয়া সম্ভব সেদিকে নজর দিতে হবে। অপরদিকে, যারা এর পূর্বে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের খুঁজে বের করা উচিত কোন বিষয়গুলোর জন্য প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে এবং সেগুলো নিয়ে কাজ করা।

এবার আসি, গাইডলাইন নিয়ে প্রস্তুতি বিষয়ে। আমার মতে, বাসায় বসে সঠিক গাইডলাইন এবং ধৈর্য সহকারে চেষ্টা করলে সাফল্য লাভ করা সম্ভব। আজকাল ইন্টারনেটের কল্যাণে আমরা সহজেই নানা ইনফরমেশন পেয়ে থাকি। এজন্য জানা ও শেখার দুয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত। শুধু প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট প্ল্যান। কিছু পয়েন্ট মানলে আপনি সহজেই বাসায় বসেই সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

১. বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করাঃ বিসিএস পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায় বিগত বছরের প্রশ্ন সরাসরি বা কিছুটা পরিমার্জিত হয়ে এসে থাকে। সেজন্য প্রথমেই উচিত প্রশ্ন বিশ্লেষণ করা। এতে করে অনেকটা ধারণা হয়ে যাবে কিভাবে, কোন বিষয়গুলো থেকে কোশ্চেন এসে থাকে।
২. সহায়ক বই পড়াঃ বিসিএস প্রস্তুতির জন্য বাজারে নানা প্রকাশনার সহায়কবই রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেছে নিতে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি তা হলোঃ যেসব বিষয় সচারাচর এসে থাকে সেগুলোর পরিপূর্ণ ব্যাখা রয়েছে কিনা এবং অন্যান্য বইয়ের সাথে তথ্য বিন্যাসে নতুনত্ব রয়েছে কিনা।
৩. বোর্ড বই পড়াঃ আমাদের অনেকেই ভেবে থাকেন বিসিএস প্রস্তুতিতে বোর্ড বই পড়ার ব্যাপারে। সেক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে যেসব টপিক থেকে প্রশ্ন এসে থাকে সেগুলো পড়া। কেননা বেশি তথ্য মনে রাখা সম্ভব নয়। সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কৌশল অবলম্বন করে পড়তে হবে।
৪. পত্রিকা পড়াঃ প্রতিদিন পত্রিকা পড়ার অভ্যাস আপনাকে অন্যের চেয়ে এগিয়ে রাখবে কয়েকগুণ। এছাড়া এটি ভাইবা, রিটেন সহ নানা পরীক্ষায় সহায়তা করবে। প্রতিদিন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক পাতা পড়তে হবে।
৫. কয়েকটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব বেশি দিতে হবে, সেগুলো হলো গণিত এবং ইংরেজি। এ দুটো যেহেতু অনুশীলন এর বিষয় এজন্য প্রতিদিন নিয়ম করে অনুশীলন করতে হবে।
৬. এরপর বাজারে বিভিন্ন মডেল টেষ্ট বই পাওয়া যায়। বিষয় ভিত্তিক প্রস্তুতি শেষে সময় ধরে পরীক্ষা দিন। এতে করে যেসব জায়গায় প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে তা নিয়ে জানতে পারবেন এবং সেগুলো বারবার অনুশীলন করতে পারবেন।

এছাড়াও প্রতিদিন নিয়মিত পড়তে বসা জরুরি। যদিও রেগুলারিটি মেইনটেইন করা প্রথমদিকে কষ্টসাধ্য তবুও প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসুন। বিসিএস প্রস্তুতির অন্যতম একটি বিষয় হলো ধৈর্য রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আপনি বেশি জানার জন্য পড়ছেন নাহ, প্রস্তুতি সফল করতে অপ্রয়োজনীয় বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে। নিয়মিত এবং সুনির্দিষ্ট প্ল্যান অনুযায়ী পড়াশোনা আপনাকে পরীক্ষার পূর্বের বাড়তি চাপ থেকে রক্ষা করবে। এবং করে তুলবে আত্নবিশ্বাসী।

কোচিং সেন্টারের বিষয় নিয়ে বলতে গেলে যে বিষয়টি প্রথমেই বলতে চাই তা হচ্ছে, এটি জরুরি না তবে আপনাকে সাহায্য করবে। কিন্তু অন্ধবিশ্বাস নিয়ে অনেকেই কোচিং জয়েন করেন যে সেখানে সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব। কোচিং শুধুমাত্র আপনাকে একটা গাইডলাইন দিবে, বাকি কাজ নিজেকেই করতে হবে। তবে কোচিং এর পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ বেশ জরুরি এতে করে নিজের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সম্ভব। তবে নিয়মিত পড়াশোনা করে পরীক্ষাগুলো দিলে সুফল লাভ করবেন।

পরিশেষে, আপনাকেই ঠিক করতে হবে কিভাবে প্রিপারেশন নিলে তা আপনার জন্য সুবিধাজনক। গ্রুপস্ট্যাডি অনেক উপযোগী বিষয় সঠিক প্রস্তুতি নিতে। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে যেখানে অনেকেই তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকেন। এসব গ্রুপ জয়েন করে তথ্য গ্রহণ করতে পারেন। অনেকেই ভেবে থাকেন কোচিং ব্যাতিত প্রস্তুতি সফল হবেনা। কিন্তু এরকম বহু নজির রয়েছে। শুধুমাত্র আপনার কাজ হচ্ছে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন, সফলতা আপনার জন্যই রয়েছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *