নতুনদের প্রিলিমিনারি প্রস্তুতিতে যতসব ভূল

প্রতিবছর প্রায় তিন-চার লক্ষাধিক প্রার্থী বিসিএস প্রিলিমিনারিতে আবেদন করে। তম্মধ্যে বিশ হাজার প্রার্থীকে পরবর্তীতে বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। তাই বলা যায়, আপনার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রথম ধাপ বিসিএস প্রিলিমিনারি। অতএব বুঝতেই পারছেন, আপনি যদি বিসিএস ক্যাডার হতে চান তবে প্রথমেই ২০০ মার্কের নৈব্যত্তিক পদ্ধতির এই পরীক্ষাটিতে ভাল ফলাফল অর্জন করা খুব জরুরী। 

বিসিএস প্রিলিমিনারির এই এত এত প্রতিযোগীর সংখ্যা দেখে অনেকেরই ধারণা হয়, প্রিলিমিনারিতে পাশ করা অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু ব্যাপারটি আসলে তা নয়। আপনি যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়মমাফিক কপড়াশোনা করেন, তবে বিসিএস প্রিলিমিনারি জয় করা আহামরি কঠিন হবে নাহ। 

তবে সমস্যাটা হচ্ছে বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি গ্রহণে একদমই নতুন যারা, তাঁরা এই সামগ্রিক প্রস্তুতির প্রক্রিয়াটিতে যথাযথ দিকনির্দেশনার অভাবে বিভ্রান্ত হতে পারে। ফলস্বরূপ বিসিএস প্রিলিমিনারিতে আসে ব্যার্থতা। আর তাই আপনি যদি বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি গ্রহণে একদম নতুন হন, তবে আপনার জানা দরকার নতুন হিসেবে অন্যান্যরা সচরাচর কি ভূল করে। এখন মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে, এই তথ্য জেনে আমার লাভ কি? আপনার লাভ মূলত আপনি তাঁদের ভূল টা থেকে আপনার জন্য কোনটা সঠিক খুঁজে বের করতে পারবেন এবং আপনার সামগ্রিক করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয় বুঝতে পারবেন।

তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক, নতুনদের বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতিতে যে সব ভূল হয়ে থাকেঃ

বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ না করা

বিসিএস প্রিলিমিনারিতে সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রথমেই একজন পরিক্ষার্থীর উচিত বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালভাবে পড়া। তবে নতুন যারা প্রস্তুতি শুরু করে তাঁদের ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যেই  বিসিএস এর বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ঠিকমতো পড়ার ব্যাপারে উদাসীনতা লক্ষ্যণীয়। যেটি তাঁদের প্রথম এবং প্রধান ভুল। 

কেননা বিগত বছরের বিসিএস প্রশ্ন তথা ১০ম বিসিএস থেকে সর্বশেষ ৪২ তম বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রশ্নগুলো খুঁটিয়ে পড়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রশ্ন পদ্ধতি বা ধরণ সম্পর্কে একটা সামগ্রিক ধারণা তৈরী হয়। যা আপনাকে আপনার পড়ার ধরণ কিংবা পরিকল্পনা কিরকম হওয়া উচিত তা বুঝতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি আপনার দূর্বলতাগুলো খুব সহজেই আপনি শনাক্ত করতে পারবেন। এছাড়াও অনেকসময় দেখা যায় যে, বিগত বছরের কিছু প্রশ্ন আবার হুবহুও পরীক্ষায় চলে আসে। 

তাই বুঝতেই পারছেন, বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি গ্রহণে আপনি যদি নতুন হন, আর বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ যদি না পড়েন তবে তা আপনার জন্য কতটা ক্ষতিকর হবে। 

মৌলিক বইয়ে জোর না দেওয়া

যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য সত্যিকার অর্থে মূল বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও এ ব্যাপারটি ব্যতিক্রম নয়। তবে নতুনদের ক্ষেত্রে অনেকেই মূল বইয়ের উপর গুরুত্ব না দিয়ে সহায়ক বইগুলোর উপর বেশি জোড় দেয়, ফলস্বরূপ পুরো পড়ার ধরনেই বিঘ্ন ঘটে। পক্ষান্তরে মূল বইগুলো পড়ার মাধ্যমে প্রথমেই একটা ভাল ব্যসিক ধারণা তৈরী হয়।  

সুতরাং বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি গ্রহণে যদি আপনি নতুন হন, আপনার উচিত মূল বইগুলো প্রথমে সংগ্রহ করা। যেমন, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিভিন্ন বোর্ড বই, সাহিত্য বিষয়ক বই সমূহ, সংবিধান সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বই সমূহ নিজ সংগ্রহে রাখুন। অতঃপর নির্দিষ্ট   সিলেবাস অনুযায়ী ঐ বইগুলো থেকে প্রয়োজনীয় টপিক পড়ে ফেলুন। ফলস্বরূপ আপনার পরবর্তী করণীয় কি এবং সহায়ক আর কোন বইগুলো দরকার এ সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা জম্মায়।

তাই বুঝতেই পারছেন যে, আপনি যদি বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি গ্রহণে আপনি যদি নতুন হন, তবে মূল বই না পড়ে থাকলে আপনার প্রস্তুতির গোড়াতেই গলদ থেকে যাবে। যা আপনার সাফল্য অর্জনের অন্তরায়।

সহায়ক বই নির্বাচনে অসতর্কতা

বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির জন্য মূল বইয়ের পরেই যে বিষয়টা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত তা হলো সহায়ক বই নির্বাচন। তবে এক্ষেত্রে ঝামেলার বিষয় হলো বাজারে একই বিষয়ের উপর অসংখ্য সহায়ক বই পাওয়া যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোন বইটি ক্রয় করলে ভালো হবে এবং ফলপ্রসূ হবে এ বিষয়টি নিয়ে নতুন যে কোনো বিসিএস প্রত্যাশীই দ্বিধায় পড়ে যায়। 

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা তো আছেই। অমুক বই থেকে বেশি কমন, তমুক বই পড়লে বিসিএস নিশ্চিত এরকম নানান ধরনের কথাবার্তা যেন ভেসে বেড়ায়। নানা জনের নানান মতামত শুনে পড়ে যায় বিভ্রান্তিতে। অতঃপর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে রঙিণ সব বই কিনে ঘরে নিয়ে আসে ঠিকই, কিন্তু ভুলে ভরা সেসব বই আর পড়ার ইচ্ছা হয় নাহ। ফলস্বরূপ পড়াশোনায়ও ঘটে ব্যাঘাত এবং সেইসঙ্গে প্রিলিমিনারি প্রস্তুতিরও দফারফা ঘটে।

তাই এক্ষেত্রে নতুন হিসেবে আপনার উচিত সহায়ক বই কেনার ব্যাপারে আপনার পরিচিত এবং বিশ্বস্ত ও বিজ্ঞ কারো পরামর্শ নেওয়া। অতঃপর বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নৈতিকতা মূল্যবোধ ও সুশাসন এই প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি করে বই সংগ্রহ করা।

কোচিং বিভ্রাট

নতুনদের মধ্যে অনেকেরই ধারণা বিসিএস প্রিলিমিনারিতে টিকতে হলে বিসিএস কোচিং করা অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু এ ধারণাটি একদমই সঠিক নয়। বিসিএস প্রিলিমিনারিতে টিকতে হলে কোচিং যে করতেই হবে এমন কোন আবশ্যকতা নেই। যতই কোচিং করেন না কেন আপনি প্রিলিমিনারিতে টিকবেন নাহ, যদি না আপনি নিজে আগে ঠিক না হন। কোচিং আপনাকে একটা গাইডলাইন দিবে, বাকি কাজটা কিন্তু আপনাকেই করতে হবে। 

নতুনদের ক্ষেত্রে অনেককেই দেখা যায় দৈনিক ৩-৪ ঘন্টা কোচিং এর পেছনে সময় ব্যয় করে আসে ঠিকই, কিন্তু পরবর্তীতে নিজ পড়াটুকুর সময় বের করতে পারে নাহ। ফলস্বরূপ প্রস্ততি কিন্তু একেবারেই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আবার অনেকে অমুক ব্রাঞ্চ ভাল নাহ তমুক ব্রাঞ্চ ভাল, এই কোচিং ভাল না ঐ কোচিং ভাল এরকম নানামুখী বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। এক্ষেত্রে ঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে না পারার কারণে অনেকেই বিসিএস প্রিলিমিনারিতে এসে চূড়ান্ত রূপে ব্যার্থ হয়। 

বিসিএস কোচিং করা না করা এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। কোচিং আপনাকে একটি নিয়মে আবদ্ধ করবে, ফলে আপনার পড়াশোনায় একটা নিয়মতান্ত্রিকতা থাকবে। তবে এক্ষেত্রে আপনার ভূমিকাটাই কিন্তু মুখ্য। আপনি কিভাবে কোচিং কে কাজে লাগাতে পারছেন এটাই মূল বিষয়। যদি একান্তই কোচিং না করেন, তবে শেষ সময়ে কিছু মডেল টেস্ট দিতে পারেন। যা আপনার দূর্বলতা কিংবা পরীক্ষার হলে সময় ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ ঠিক সময়ে সব উত্তর করে আসার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

নিয়মানুবর্তিতার অভাব ও মুখস্ত নির্ভরতা

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক ও পরিকল্পনামাফিক ভাবে পড়ার কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত রূটিন করে না পড়ার দরূন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয় অনেকেই। তাই নতুন হিসেবে মানবন্টন, সিলেবাস এসব সম্পর্কে জানার পরই আপনার উচিত প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট রূটিন করে নেয়া। এক্ষেত্রে অনেকেরই আবার রূটিন ঠিকই তোড়জোড় করে তৈরী করা হয়, কিন্তু সেই রূটিন মেনে চলা আর হয়ে উঠে না। তাই খেয়াল রাখতে হবে, রূটিন টি যেন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী হয় এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী যেন হয়।

বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে নতুনদের করা ভুল গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ভুল হলো মুখস্ত নির্ভরতা। অর্থাৎ বিসিএস প্রিলিমিনারি যেহেতু নৈব্যত্তিক ভিত্তিক তাই অনেকেই মনে করে যতবেশি তথ্য মুখস্ত রাখা যাবে পরীক্ষায় তত বেশি নৈব্যত্তিক দাগানো যাবে তথা ভাল ফলাফল করা যাবে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এমন ভাবনাটাই কিন্তু আপনার জন্য কাল হয়ে দাড়াতে পারে। বিসিএস প্রিলিমিনারি কিন্তু শুধু সাধারণ জ্ঞান ভিত্তিক পরীক্ষাই নয় বরং মানসিক দক্ষতার, কম্পিউটার জ্ঞান, গণিত সহ অন্যান্য বিষয়াবলীও কিন্তু এর অন্তর্গত। তাই এক্ষেত্রে কিন্তু মুখস্তবিদ্যার উপর নির্ভরশীল হয়ে সফল হওয়া সম্ভব নয়।

পরিশেষে,

উপরোক্ত আলোচ্য বিষয়াদি মাথায় রেখে আপনার বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করুন। আপনার দূর্বলতা এবং সামর্থ্য কে চিহ্নিত করুন। অতঃপর সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরী করে নিজেকে বিসিএস প্রিলিমিনারির যোগ্য হিসেবে প্রস্তুত করুন। আর আপনার এই যাত্রা পথকে মসৃণ করতে Careersongbad এর সাথেই থাকুন। আপনার প্রয়োজনীয় যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়াদি সম্পর্কিত তথ্য পাবেন আমাদের ব্লগ সেকশনে। ধন্যবাদ।

নতুনদের প্রিলিমিনারি প্রস্তুতিতে যতসব ভূল

বিসিএস কর ক্যাডার

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *