বিসিএস জয়ের নীলনকশা, কিছু অজনপ্রিয় টিপস
জীবনে যে কোনো ক্ষেত্রে দরকার একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। পরিকল্পনা ছাড়া বেশি দূরে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। সঠিক সময়ে সঠিক ক্যারিয়ার প্লানিং করতে না পারলে অনেক বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়। বিশেষ করে আপনার যদি লক্ষ্য থাকে বিসিএস। বর্তমান সময়ে যতগুলো পেশা আছে তার মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে বিসিএস।
রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের সঙ্গে সরাসরি অংশ নেওয়ার সুযোগের সাথে চাকরির নিরাপত্তা, উচ্চশিক্ষার সুযোগ, বেতন ভাতা সুবিধা, সামাজিক মর্যাদাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে পরিচয়ের কারণে বিসিএস পরীক্ষা বর্তমানে সকলের স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিসিএস জয় করার জন্য দরকার একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। যে পরিকল্পনা আপনাকে অন্যদের থেকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
কারণ বিসিএস পরীক্ষায় সিটের থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই আপনার পরিকল্পনা সাথে যদি কিছু টিপস যুক্ত করতে পারেন তাহলে সেটি আরও বেশি কার্যকরী হয়ে উঠবে। কারণ আপনি যত বেশি কৌশলী হবেন তত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। নিচে বিসিএস জয়ের নীল নকশা কিছু অজনপ্রিয় টিপস সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ
নিজেকে তৈরি করুন
বিসিএস পরীক্ষায় না টিকলে জীবন মিথ্যা হয়ে যাবে, এমন ধারণা নিয়ে পরীক্ষায় বসবেন না। আত্মবিশ্বাসের সাথে পরীক্ষা দিন। কারণ মৌখিক পরীক্ষায় সফলতা নির্ভর করে আত্মবিশ্বাসের ওপর। সমসাময়িক সকল বিষয়ে যেমন আন্তর্জাতিক দেশের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখুন। চলমান বিশ্বের সকল বিষয়ে ধারণা থাকলে সহজেই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করা যায়।
আপনি অনেক জানেন,পড়েছেন, প্রস্তুতি নিয়েছেন কিন্তু সেইসব পরীক্ষার হলে সময়মতো লিখতে/ প্রকাশ করতে করতে পারলেন না, তাতে কোন সাফল্য আসবে না। বরং হতাশা আপনাকে গ্রাস করবে। তাই নিজেকে প্রস্তুত করে তুলুন। প্রিলি পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সার্চ করুন, লিখিত পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিন এবং মৌখিক পরীক্ষার জন্য আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেকে তুলে ধরুন।
বিসিএস পরীক্ষা অনেক বেশি সময় নিয়ে হওয়ার কারণে আপনি যেমন অনেক সময় পাবেন তেমনিভাবে মানসিকভাবে ধৈর্যও হারিয়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু বিসিএসের জন্য আসলে ধৈর্য ধরে পড়ে যেতে হবে। আপনি যদি ধৈর্য ধরে এই সময়টাকে নিজেকে প্রস্তুত করার কাজে লাগান তাহলে অবশ্যই আপনি সাফল্য পাবেন।
বিসিএস পরীক্ষায় হবে ধ্যান জ্ঞান
আপনি যদি বিসিএস পরীক্ষা দিতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার সকল ধ্যান-জ্ঞান জুড়ে থাকবে বিসিএস পরীক্ষা। আপনি যখন কোন কাজ করবেন তখন অবশ্যই সেটি আপনার বিসিএস পরীক্ষার সাথে কতটুকু রিলেটেড বা আপনার পরীক্ষা তে কিভাবে সাহায্য করবে সেটি ভেবে করবেন।
আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের সাথে বিসিএস কে জড়িয়ে ফেলবেন। যার ফলে আপনি মানসিকভাবেও আস্তে আস্তে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন। আপনার মনে হবে যদি কেউ বিসিএস পরীক্ষায় টিকে সেটি হবেন আপনি।
অনুপ্রেরণা তৈরি
আপনি যদি আপনার মধ্যে ক্যাডার হওয়ার অনুপ্রেরণা তৈরি করতে পারেন তাহলে আপনার পথ চলাটা সহজ হয়ে যাবে। মানুষ যে জিনিসটি পছন্দ করে বা যেই জিনিসটি সে চায় সেই কাজটি করার ক্ষেত্রে তার কষ্ট কম হয়। তাই আপনি যদি নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন তাহলে আপনার আত্মবিশ্বাসের সাথে সাথে একটি ভালো লাগা কাজ করবে।
আপনি এই জন্য বিভিন্ন বড় ভাইদের সাথে কথা বলতে পারেন, পত্রপত্রিকা, টিভি বা অন্যান্য মিডিয়াতে বিসিএস ক্যাডারদের যে ভাইবাগুলি হয় সেগুলো দেখতে পারেন। দেশের স্বনামধন্য কয়েকজন বিসিএস ক্যাডারের পত্রিকার কাটিং এবং ফেসবুকে লেখা, তাদের উদ্দীপনামূলক কথা বারবার পড়তে পারেন ও দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় টানিয়ে রাখতে পারেন।
বিসিএস কোচিংয়ে যে ফ্রি সেমিনারগুলো হয় সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারেন।সেখানে অনেক বিসিএস ক্যাডার বিভিন্ন ধরনের লেকচার দেয়। সেগুলো মানার চেষ্টা করতে পারেন। অনেক রকম টকশো হয় বিসিএস নিয়ে সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। বিসিএস নিয়ে অনেক ধরনের পর্যালোচনা, আলোচনা হয় সেগুলো পড়তে পারেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্য পালন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করা এই সবকিছু ভেবে আপনি নিজেকে অনুপ্রেরণা দিতে পারেন।
নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন
মনে রাখবেন বিসিএস পরীক্ষায় আপনার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী আপনি নিজে। নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন যে আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে। নিয়মিত লেখাপড়া করুন। রেফারেন্স বইয়ের সকল প্রয়োজনীয় অংশগুলো নিয়মিত পড়তে পারেন। লিখিত পরীক্ষার খাতায় প্রচুর ডাটা, চার্ট দিলে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। সেজন্য সেগুলো বেশি বেশি চর্চা করতে থাকুন। দেশ-বিদেশ সম্পর্কে প্রচুর জানার চেষ্টা করতে হবে।
বিশেষ করে নিজের জেলা বিভাগ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান থাকা দরকার। এক্ষেত্রে নিয়মিত দেশি-বিদেশি পত্রিকা ও ‘মাসিক আর্টিকেলস অ্যান্ড কলামস’র মতো পত্রিকাগুলো পড়া যেতে পারে। আপনার চ্যালেঞ্জ থাকবে কি করে প্রতিদিন গতকালের চেয়ে একটু বেশি পড়া যায়, বেশি তথ্য সম্পর্কে জানা যায়।
প্রতিনিয়ত নিজেকে যাচাই করতে থাকেন। মডেল টেস্ট দিন। নিজেই নিজের পরীক্ষা নিতে থাকুন। নিজেকে মূল্যায়ন করুন। ভাইবার জন্য বারবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের সাথে প্র্যাকটিস করুন। আপনার যে সকল দুর্বলতা গুলো আছে সেগুলো খুঁজে বের করে, সেইগুলোকে ঠিক করার চেষ্টা করুন। আপনি নিজেকে চ্যালেঞ্জ করলেই আস্তে আস্তে নিজের সকল দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
পড়ার পরিবেশ তৈরি করুন
আপনি যখন কোন কিছু করবেন সেখানে যদি আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগ না থাকে তাহলে সে কাজটি আপনি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন না। পড়ার ক্ষেত্রেও যদি আপনার মনোযোগ না থাকে তাহলে আপনি যতই পড়েন, আপনার কিছু মনে থাকবে না। সেজন্য আপনার দরকার একটি স্বাভাবিক পড়ার পরিবেশ। যেখানে আপনি মনোযোগ সহকারে স্বাচ্ছন্দ্যময়ভাবে পড়াশুনা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার পরিবারের সহযোগিতা নিতে পারেন।
সর্বোপরি নিজের চেষ্টা, আত্মবিশ্বাস এবং মনোবল নিয়ে এগিয়ে যান অবশ্যই আপনি সফল হবেন।